রাতুলের মেজর ডিপ্রেসিভ ডিজঅর্ডার যতখানি ঘটেছে তা রিকভার করা বেশ শক্ত হয়ে উঠেছে ডাক্তারদের প¶ে। তবে অভিজ্ঞ এ ডাক্তার সাহেব আশা ছাড়ছেন না। তাকে আরো কিছুদিন অবজারবেশনে রাখতে চান তিনি। একমাত্র ছেলের এ অবস্থায় শরীফউদ্দিন পাথর হয়ে গেছেন। তার চোখে এখন আর কোন কান্না অবশিষ্ট নেই। মেয়েটাকে বুকে নিয়ে ওর মা এখন পাগোল প্রায়। এদিকে ডাক্তার, পথ্য, এত খরচ ----- । এক অনিশ্চিত আশংকার কালো মেঘে ছেয়ে গেছে তার ভবিষ্যত ¯^প্নগুলো। প্রচন্ড আর্থিক চাপের মুখে নিপতিত হয়েছেন । অন্য কোন সাপোর্ট না থাকায় তিনি আরো অসহায় হয়ে পড়েছেন। রাতুলের মাকে সামাল দেয়াও তার প¶ে দুর্বোধ্য হয়ে উঠেছে। অবশ্য এরই মধ্যে খবর পেয়ে তার শাশুড়ি এসেছেন। শশুর বেঁচে নেই। ষাটোর্ধ এ মহিলা প্রচন্ড শক্ত চিত্তের মানুষ। বার্ধক্যকে উপে¶া করে তিনি এখনো এত বড় সংসারের সব দিক বিচ¶ণতার সাথে মেনটেন করছেন। এ যুগে ক’জনাইবা তা পারেন । নিঃ¯^ন্দেহে এ তার এক অসাধারন সাফল্য । অনেক ঝক্কি-ঝামেলা পিছে ফেলে নাতীর এ বিপর্যয়ে অসীম সাহস আর মনোবল নিয়ে মেয়ের পাশে দাঁড়িয়েছেন। তাকে দেখলে মনে হয় যেন কোন দৈব শক্তি পেছন থেকে শক্তি যোগান দিয়ে তাঁর হৃদয়টাকে এত শক্ত হতে সহায়তা করছে। কিছুটা হলেও মানসিক সাপোর্ট পেয়ে রাতুলের বাবা একটু ¯^¯ি—র নিঃশ্বাস ফেলতে অবকাশ পেলেন।
দেখতে দেখতে অনেকগুলো রাত পার হয়ে গেল। শরীফউদ্দিন এখন বড় ক্লাš—। মনে হয় যেন জীবনবায়ু বেরিয়ে ফুটো বেলুনের মত চুপসে আসছে । দু’চোখের পাপড়িগুলো পরস্পরকে বরাবরের মতই বিকর্ষন করে চলেছে। তাদের এ বিরোধিতার সুযোগ নিয়ে মণিযুগল পেছন থেকে দ্র“ত বেরিয়ে পালিয়ে যেতে চাইছে । নিত্য রাতের মত আজও ভেতর থেকে তাদের নিয়ন্ত্রক মুহুর্তের মধ্যেই তাদেরকে নিয়ে গেল সেই চিরচেনা সবুজ জমিনে। আহ ! কী প্রশাšি— ! এক একটা নিঃশ্বাসে বিশুদ্ধ বাতাস ফুসফুসে প্রবেশ করে বুকের ছাতিটাকে প্রতিবার চার ইঞ্চি প্রসারিত করে দিচ্ছে। শীতল হয়ে আসছে নয়নযুগল । এতটুকু বদলে যায়নি। ঠিক আগের মতই বয়ে চলেছে ঝিরি ঝিরি শীতল বাতাস। ঝিঁঝিঁ পোকাদের ঘুমপাড়ানী গান । এখানে থেকে থেকে নেই কোন পাঁচ/দশ হাজার টন পন্যপরিবাহক যন্ত্র দানবের রাতের নিরবতা হরণের মত অমানবিক যন্ত্রণা। নেই অবাš—র নর্তন-কুর্দনরত মাতাল যুব স¤প্রদায়ের গভীর রাত পর্যš— হৈ-হুলোড়ের বিড়ম্বনা। আশে-পাশের ব¯ি— থেকে ভেসে আসছে না বিভিন্ন চ্যানেলের সংমিশ্রিত হিন্দি ফিল্ম বা টেলিসিরিয়ালের নিদ্রাহরণকারী কর্কশ কোলাহল। গাঢ় অন্ধকার, রাতের নিরবতা, কত না সুখের সে ঘুমপাড়ানীর যাদুর ছোঁয়া ! আলতো করে পাপড়িগুলো পরস্পরকে আলিংগন করল।
- অনে¶ণ ধরে তোমার মোবাইলটা বেজে চলেছে, শুনতে পাচ্ছ না ?
কে ফোন করেছে ? ধর ।
-এই নাও ।
ও, রাতুলের হেড মাষ্টার সাহেব । হ্যালো, আস্-সালামু আ’লাইকুম , মাষ্টার সাহেব, কেমন আছেন ?
-ওয়া-আ’লাইকুমুস্ সালাম । আলহামদুলিলাহ, ভাল । কংগ্রাচুলেশন্স !
কি, ব্যাপার ? হঠাৎ ? কোন খুশীর খবর ?
-আপনি এখনো শোনেন নি ?
কি বিষয় ?
-আজ জুনিয়র স্কুল সার্টিফিকেট পরী¶ার রেজাল্ট বেরিয়েছে । আমাদের স্কুল থেকে ৫ জন ট্যালেন্টপুলে বৃত্তি পেয়েছে । তার মধ্যে রাতুল ফাষ্ট হয়েছে । ওর রেজাল্ট নিতে পাঠিয়ে দিন । আজ স্কুল বন্ধ হলেও অফিস খোলা আছে ।
শোকর-আলহা’মদুলিলাহ ! মাষ্টার সাহেব, আমি সত্যিই আপনাদের সবার কাছে কৃতজ্ঞ । এর জন্য আপনাদের অবদান অপরিসীম ।
-এ সবই রাতুলের নিজ¯^ কৃতিত্ব । আমরা আর কতটুকুই বা করতে পেরেছি । সম্ভব হলে আপনিও সংগে আসুন। ওর বিষয়ে আপনার সাথে কিছু পরামর্শ করতে চাই ।
আচ্ছা ঠিক আছে ।
খবরটা শুনেই রাতুলের মা দু’রাকাত নফল নামায পড়লেন । শরীফউদ্দিনও নামায আদায় করে বেরিয়ে পড়লেন। রাতুলের মা বললেন,
-ওর স্যারদের সবাইকে আমি নিজে হাতে রান্না করে স্পেশাল কিছু খাওয়াতে চাই। তুমি উনাদের দাওয়াত দিয়ে আসবে।
খুব ভাল । আমি অবশ্য ভেবেছিলাম, কিছু ভাল মিষ্টি কিনে নিয়ে এখুনি সবাইকে মিষ্টিমুখ করিয়ে আসব ।
-সে তো খুব কমন একটা বিষয় । সবাই তা করে। আমি একটু স্পেশাল কিছু করতে চাই ।
কিন্তু , এতে খরচ কত , হিসেব আছে ?
-অন্য হিসেব থেকে কাট্ ছাট্ করে পুষিয়ে নিতে পারব । অত হিসেব করে জীবন চলে না।
বেশ, যা ভাল মনে কর । আমার আয় যে কত সীমিত, সে তোমার চেয়ে ভাল আর কে জানে ।
-ইনশালাহ । এর ভেতর দিয়েই ভাল কিছু হবে ।
আলাহ ভরসা ।
রাতুল রেজাল্টশীট নিয়ে সব টিচারদের সালাম করে বাড়িতে ফিরে এল । যথারীতি রাতুলের মায়ের প¶ থেকে দাওয়াত দেয়া হল শি¶কদের। তারা খুব খুশী । তবে রাতুলের মাকে এত কষ্ট না করলেও চলত। সে কথা বলে এতটুকু বিনয় প্রকাশের ত্র“টি করলেন না কেউই । হেড মাষ্টার সাহেব রাতুলের বাবাকে নিয়ে তার নিজের ক¶ে গেলেন।
-হ্যা, শরীফ সাহেব, যে জন্য আপনাকে ডেকেছি, সেটা শুনলে আপনি আশা করি আরো খুশী হবেন ।
বলুন, স্যার ।
-আমি ব্যক্তিগতভাবে খুব ¯^ার্থপর নই । যদি ¯^ার্থপর হতাম, তবে ওর মত ছেলেকে আমার স্কুলে ধরে রেখে সাফল্যের খুশীর কৃতিত্ব নিয়ে বড়াই করতাম। কিন্তু আমি মনে করি, ওকে অনেক বড় স্পেস দেয়া দরকার ।
ঠিক বুঝতে পারছি না, কি বলতে চাইছেন ।
-দেখুন, রাজবাড়ি থেকে রাজধানী থেকে খুব বেশী দূরে নয়। ওর মত একটা ট্যালেন্ট এর জায়গা এটা নয়। ওকে ঢাকার অনেক নামী দামী উন্নত মানের স্কুল/কলেজ লুফে নেবে। সেখানে ও আরো ভাল কিছু করতে পারবে। অনেক বড় হবে। দেশ ও দশের অনেক বড় কাজে আসবে। বর্তমান তথ্য প্রযুক্তির এ যুগে রাজধানী যতটা এগিয়েছে সে অবস্থানে আসতে মফ¯^ল শহরগুলোর আরো অনেক সময় লাগবে। সুতরাং তাকে এতটুকু গন্ডির মধ্যে আটকে রাখা ঠিক হবে না।
কিন্তু আমি যে চাকরী করি, তার উপর ভরসা করে রাজধানীতে টিকে থাকা , ওর লেখাপড়ার খরচ মেটানো --- ওরে , বাবা, এ কথা ভাবতেই পারি না।
-হ্যা, একটু তো কঠিন বটেই । কিন্তু আপনার পোষ্টে যারা ঢাকায় চাকরী করেন, তাদের সবারই কি ঢাকায় নিজের বাড়ি আছে ? তারা পারলে আপনি কেন পারবেন না ? এরকম একটা মেধাবী ছেলের জন্য আপনাকে কিছু কষ্ট করা তো উচিত, তাই না?
হ্যা, ঠিকই বলেছেন । আপনার কথার মধ্যে যুক্তি আছে। কিন্তু আমি তো মনে করি, আপনাদের নেতৃত্বে ও এখানেই এস, এস, সিতে ভাল ফল করবে । সেটিই কি যথেষ্ট নয় ?
-অবশ্যই ভাল করবে । কিন্তু এখনকার দুনিয়ায় তথ্য প্রযুক্তির এ যুগে নতুন প্রজন্ম যে গতিতে, যেভাবে এগিয়ে চলেছে তাতে শুধু এটুকু ভালই যথেষ্ট নয়। ওর মেধা বিকাশে আরো অনেক বড় জগতের প্রয়োজন ।
মানতেই হবে । বেশ চিš—ায় ফেলে দিলেন । দেখি , বিষয়টা নিয়ে আরো ভেবে দেখি। আপনাকে অনেক ধন্যবাদ।
প্রধান শি¶কের কথায় ভরসা করে রাজধানীর নামকরা বিদ্যাপিঠে ভর্তি করালেন রাতুলকে। তিনি নিজেও চেষ্টা তদবীর করে ঢাকায় বদলী হয়ে এলেন। এ শহরের জীবনমান টিকিয়ে রাখতে তাকে প্রচন্ড গতিশীল হতে হয়েছে। আর তাই জীবন ও জীবিকার তাগিদে তিনি পরিবারকে তেমন সময় দিতে পারেন না। ব্য¯— জীবনের ধাক্কা সামলাতে আর সংসারের আর্থিক ঘাটতি পূরণ সহ সব দিক মেনটেন করতে যেয়ে রাতুলের মাকেও দৌড়ের উপর থাকতে হচ্ছে । কিন্তু সব কষ্ট ভুলিয়ে দিয়ে রাতুল তাদের মুখে হাসি ফুটিয়ে দিল ।
-রাতুলের মা, আজ আমি ধন্য ।
.কি ব্যাপার ? এত খুশী যে ?
-আরে, আমি খুশী হব না তো কে হবে , বল ? এই দেখ । রাতুলের কৃতিত্ব । তার অসাধারণ সফ্টওয়্যার আবিষ্কার নিয়ে সারা দুনিয়া জুড়ে এখন তোলপাড় চলছে। দেখ, পেপারে লিখেছে সে কথা।
.কিন্তু গত পরশু রাতেইতো ওয়েব ক্যামে আমার সাথে ওর কথা হল, কিছু বলল না তো ? কৈ, দেখি , কি লিখেছে।
ইউনিভার্সিটি অব লুক্সেমবার্গ এ কম্পিউটার সাইন্স এর উপর বাংলাদেশী ছাত্রের অসাধারণ কৃতিত্ব
বি¯—ারিত খবরঃ বাংলাদেশের মুখ উজ্জল করল আর এক সম্ভবনাময় তর“ন ছাত্র মোঃ আসেকুর রহমান রাতুল। তিনি বুয়েট থেকে সাফল্যের সাথে আই টি বিভাগ থেকে মাষ্টার্স সম্পন্ন করে ইউনিভার্সিটি অব লুক্সেমবার্গ এ কম্পিউটার সাইন্স এর উপর পি এইচ ডি করতে আসেন। এখানে তিনি এক অসাধারণ সফ্টওয়্যার আবিষ্কার করে সারা দুনিয়ার মানুষকে তাক লাগিয়ে দিয়েছেন। তার আবি®কৃত সফ্টওয়্যারের নাম “রিডার-অব হিউম্যান ক্যারেক্টার’’ । এর আগে চযুংরড়মহড়সু বিদ্যায় কোন মানুষের মুখমন্ডল এর হাবভাব দেখে তার মনোভাব নির্ণয় করার বিষয়টা বিজ্ঞানীরা অনেকদূর এগিয়ে নিয়ে গেলেও বাংলাদেশের ছেলে রাতুল এমন একটা সফ্টওয়্যার আবিষ্কার করেছে যা সত্যিই অবিশ্বাস্য । বহনযোগ্য মোবাইল এর টাস স্ক্রীনে কোন মানুষের শরীরের যে কোন অংগ স্পর্শ করলেই ঐ মানুষের ম¯ি—ষ্ক স্পর্শের পূর্বমুহুর্ত পর্যš— বিগত আট ঘন্টা যাবৎ যা কিছু চিš—া করেছে তা কয়েক সেকেন্ডর মধ্যেই রিড করে ফলাফল দেখিয়ে দিবে। তার এই অভিনব গবেষণা মানুষের মধ্যে প্রচন্ড সাড়া ফেলে দিয়েছে। অধিকাংশ মানুষ একে ইতিবাচক হিসেবে গ্রহণ করতে চাইছে। আবার কিছু মানুষ এটাকে এখুনি প্রকাশ করতে নারাজ। এরই মধ্যে আমেরিকা তার এ গবেষণালব্ধ বিষয়টা পরী¶া করার জন্য তাকে ডেকে পাঠিয়েছে । তারা এটির ইতিবাচক/নেতিবাচক উভয় দিক পরী¶া করে আপাতত এটি প্রচার, প্রসার থেকে বিরত থাকার জন্য বলেছে। কিন্তু অন্যান্য দেশ এটি দ্র“ত মার্কেটে আনার জন্য উদ্যোগ নিতে চাইছে। এ নিয়ে যুক্ত রাষ্ট্রের সাথে অন্যান্য রাষ্ট্রগুলোর মধ্যে শীতল যুদ্ধ শুর“ হয়েছে । তবে আশার কথা এই যে, যুক্তরাষ্ট্রের বিরোধিতা ¯^ত্তেও পৃথিবীর অন্যান্য অংশের অধিকাংশ মানুষের চাহিদার কথা বিবেচনা করে শীঘ্রই এটি বাজারজাত হতে যাচ্ছে।
রাতুলের ছবি সহ এরকম একটা খবর দেখে খূশীতে আপুত রাতুলের মা-বাবা ।
মাশ্-আলাহ । আলহা’মদুলিলাহ । হে আলাহ, তোমার দরবারে লাখো কোটি শুকরিয়া ।
রাতুলের মা, ও রাতুলের মা --------
চিৎকার শুনে পাশে শুয়ে থাকা রাতুলের মা ধড় ফড় করে উঠে বেড সুইচটা চাপ দিলেন। কপালে হাত রেখে দেখলেন, ঘেমে ভিজে গিয়েছেন। আ¯ে— করে মাথায় হাত বুলিয়ে বলছেন,
রাতুলের আব্বু, রাতুলের আব্বু, কি হয়েছে ? কোন দুঃ¯^প্ন ?
লাফ দিয়ে উঠে বসল । এদিক , ওদিক তাকিয়ে আবার শুয়ে পড়ল ।
-আযান হয়ে গেছে ?
.না, তবে সময় হয়ে এসেছে ।
রাতুলের মার কৌতুহলী প্রশ্নের কোন জবাব না দিয়ে দ্র“ত উঠে পড়ল । চোখ দুটো ঝাপসা হয়ে এল রাতুলের মায়ের। বেচারা, ছেলেটার জন্য শেষে কি পাগোল হয়ে যাবে ?
সকালে রাতুলের মা হাসপাতালে এলেন।
সীম কার্ড এর ভাংগা টুকরোর মত দেখতে অজানা এ বস্তুটা ডাক্তার সাহেবের হাতে দিয়ে বললেন,
-দেখেন তো, এটা কি ?
. কোথায় পেলেন ?
-রাতুলের জামা ধোয়ার সময় ওর পকেটে এটি পেয়েছি। কী , এটা ?
ডাক্তার সাহেব হাতে নিলেন।
.আপনি জানেন না , এটা কি ?
- নাতো ?
.রাতুলের আব্বাকে দেখিয়েছেন ?
-এটা আজই পেয়েছি । উনি তো অফিসে ।
.আচ্ছা ঠিক আছে, আপনি এখানে বসুন । আমি দেখছি ।
ওর ব্যবহৃত মোবইল সেটটা আছে ?
রাতুলের মা তার ব্যাগ থেকে বের করে দিলেন । হ্যা, এই তো ।
ডাক্তার সাহেব এটি নিলেন এবং বললেন, উড়হ’ঃ ড়িৎৎু . আপনি বসুন। ওর সাথে বেশী কথা বলবেন না। আমি আসছি ।
ডাক্তার সাহেব চেম্বারে গেলেন। কিছু¶ণ পর আবার ফিরে এলেন রোগীর পাশে। চুপটি করে ওর মুখের দিকে চেয়ে পলকহীন দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছেন। মনে হল যেন তিনি অন্য এক রকম রোগীকে দেখছেন আজ ।
সন্ধ্যায় পূবাকাশে বিশাল পুর্ণিমার চাঁদটা ইপিল ইপিল গাছের পাতার ফাঁক-ফোকড় ভেদ কের মিট মিট করে হাসছে। জানালার ফাঁক দিয়ে সেদিকেই পলকহীন তাকিয়ে আছে রাতুল। শিয়রে বসে অসহায় মা ভেজা চোখে দোয়া- দুর“দ পড়ছেন। ডাক্তার তার পাশে কিছু¶ণ বসে থেকে তার এ অপকলক দৃষ্টি খেয়াল করলেন। আরো কিছুটা আগ্রহী হয়ে নোট বুকটা খুলে নিয়ে বসলেন । তিনিও অপলক চেয়ে আছেন রোগীর চোখের দিকে। অধীকাংশ মেন্টাল ডিজঅর্ডার্ড রোগীদের ¶েত্রে দেখা যায় ক্লিনিক্যাল ট্রিটমেন্টের চেয়ে কোন অনুকুল পরিবেশে রোগীর মধ্যে নিজে থেকেই সাহায্যের প্রবণতা বেশী সহায়ক হয়। এতদিন পরে একটা ওয়ে অš—ত পাওয়া গেল। তাই খুব আগ্রহ নিয়ে চুপটি করে বসে অপে¶া করছেন পরবর্তী এ্যাকটিভিটিজগুলো পর্যবে¶ণের জন্য । হঠাৎ চোখ বন্ধ করে চিৎকার দিয়ে অন্য দিকে কাৎ হয়ে বালিশে মাথা গুজে রাতুল বিলাপ পাড়ছে,
নাঃ --- নাঃ -- ।
ডাক্তার সাহেব তড়িৎ গতিতে তার হাতটা ধরলেন । পাল্স বিট ঠিক আছে। কিছুটা বেশী । তবে তা উদ্বেগজনক নয় । আ¯ে— করে তার মাথাটায় হাত বুলিয়ে বললেন,
-রাতুল, রাতুল, এই দেখ, আমি , আংক্ল । দেখ , আমার দিকে ।
( দ’ুহাতে চোখ বন্ধ করে ) নাঃ --- নাঃ----
- ভয় পেয়েছ ? আমাকে বল । সব কিছু তুমি আমাকে বল। তোমার কোন ভয় নেই। তুমি ভাল হয়ে যাবে । তুমি আবার স্কুলে যাবে । তুমি অনেক ভাল ছেলে ।
অনেক দিন পর ডাক্তার সাহেবের মুখে একটু হাসির রেখা দেখা গেল। তা দেখে বোকার মত তাকিয়ে রইলেন রাতুলের মা।
আজ অফিস থেকে একটু আগেভাগেই বেরিয়ে হাসপাতালে ছুটে এলেন শরীফউদ্দিন । চোখে মুখে গভীর হতাশা। ডাক্তার খুব জর“রী তলব করেছেন । কি জানি, আবার কি দুঃসংবাদ অপে¶া করছে তার জন্য । এখন অনেকটাই পাথর হয়ে গেছেন। কোন দুঃসংবাদই আর অবাক করে দেয়না তাকে। সব মনে হয় যেন তার নিত্য সহযাত্রী । রাতুলের বাবাকে আসতে দেখে ডাক্তার সাহেব নিজের ঠোটে তর্জনী আংগুল চেপে,চোখ বড় করে তার দিকে তাকালেন, স্চুপ-------- ।
- আপনি আসুন আমার সংগে। রাতুলের মাকে বললেন, আপনি ওর পাশে বসুন ।
.কোন দুঃসংবাদ ?
-দুঃসংবাদও নয়, সুসংবাদও নয়। বসুন । মেমোরী কার্ডটা দেখিয়ে বললেন, এটি চেনেন ?
হাতে নিয়ে শরীফউদ্দিন বললেন,
.নাতো ? কী , এটা ?
-এটিকে বলে মেমোরী কার্ড । রাতুল এটি ওর মোবাইলে ব্যবহার করত । ওকে মেমোরী কার্ড ব্যবহারযোগ্য মোবাইল কেন ব্যবহার করতে দিয়েছেন ?
.আসলে মোবাইল দরকার ওর । সবগুলো টিচারদের সাথে কোচিং বিষয়ক পরামর্শ ,সিডিউল মেনটেন , মানে সব কিছুর সমš^য়ের জন্য ওর টিচাররাই বলেছে এটি ব্যবহারের জন্য ।
-হ্যা, অবশ্যই দরকার। কিন্তু তার জন্য সাধারণ একটা মোবাইলই যথেষ্ট । এত দামী সেটের দরকার কেন ?
.এটা এভাবে ভাবিনি। আর তাছাড়া এর দামতো খুব একটা বেশী না। কেনার সময় এসব তো ভাবিনি। আর বুঝিনি তো কিছু । কেন? এটিই কি ওর ¶তির কারণ ?
-হতে পারে ।
-এই সেটটা রাতুল ব্যবহার করত , তাই না ?
.হ্যা । এটি আপনার কাছে কেন ?
-ওর মায়ের কাছ থেকে নিয়েছি । এটিতে ইন্টারনেট থেকে ডাউনলোড করা কিছু সেইভড ভিডিও আছে , যা রাতুল দেখত। এখন আপনাকে দেখাব। আশা করি, রাতুলের এ অসুস্থ্যতার মূল কারণ কি, তা আপনি বুঝতে পারবেন। তবে কথা দিতে হবে, এটা দেখার পর আপনি কোনরকম উত্তেজিত হবেন না। কোন প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করবেন না। আপনাকে দৃঢ়তার সাথে অত্যš— ধৈর্যের পরিচয় দিতে হবে। ওর সুস্থ্য হয়ে ওঠার জন্য আপনাকে আমি যা পরামর্শ দেব, সেভাবেই কাজ করবেন। এতটুকু হতাশ হবেন না। এটা নিশ্চিত যে, আপনার এবং ওর মায়ের সহযোগীতা পেলে রোগী খুব দ্র“ত সেরে উঠবে।
নিন, দেখুন । মুভি চালু করে মোবাইলটা তার দিকে ঘুরিয়ে ধরলেন।
একটুখানি দেখেই দু’হাতে চোখ বন্ধ করে একটা চিৎকার দিয়ে দিয়ে উঠল। না ঃ ----
আহ ! ডাক্তার সাহেব । এ কি সর্বনাশ হয়েছে আমার !
উহু ! আগেই বলেছি । শক্ত হতে হবে। আপনি এরকম করলে রোগীকে সুস্থ্য করা সম্ভব হবে না।